ইন্টারনেট লাইফে পাসওয়ার্ড হ্যাকিং এক আতংকের নাম ! যখন তখন হ্যাক হয়ে যেতে
পারে আপনার পাসওয়ার্ড। আর পাসওয়ার্ড হ্যাকিং করে হ্যাকাররা আপনার
মহামূল্যবান গোপন তথ্য চুরি, অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স চুরি কিংবা আপনার
গুরুত্বপূর্ণ অনলাইন অ্যাকাউন্ট যেমনঃ ফেসবুক, মেইল, অনলাইন ব্যাংকিং
সার্ভিস নষ্ট করে দিতে পারে মুহূর্তেই। কিন্তু তাই বলে কি হ্যাকিং থেকে
বাঁচার কোন উপায় নেই? হ্যাকারদের ভয়ংকর হ্যাকিং থেকে রক্ষা পেতে আপনাকে
নিতে হবে পূর্ব প্রস্তুতি, মেনে চলতে হবে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা এবং জানতে
হবে সিকিউরিটি টিপস। আজ জেনে নিন, অনলাইনে পাসওয়ার্ড হ্যাকিং থেকে নিরাপদ
থাকার বেশ কিছু সিকিউরিটি টিপস। কারণ, বলা তো যায়নাঃ যেকোন সময় হ্যাকিং এর
কবলে পড়তে পারেন আপনিও?
একই পাসওয়ার্ড সব সাইটের অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করবেন না
শুধু ফেসবুক বা ই-মেইল অ্যাকাউন্টই নয়! এসব অ্যাকাউন্ট ছাড়াও প্রত্যেক
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর থাকে আরও প্রয়োজনীয় নানা অ্যাকাউন্ট। সচারচর
প্রত্যেক অনলাইন ইউজার তাঁর সকল অনলাইন অ্যাকাউন্টে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার
করে থাকেন। অর্থাৎ ফেসবুক, জিমেইল, ইয়াহু কিংবা যেকোন ওয়েবসাইটের
অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যা মোটেও
ঠিক না। কারণ, কোন কারণে আপনি যদি হ্যাকিং –এর শিকার হোন। তবে হ্যাকার
আপনার একটি মাত্র পাসওয়ার্ড জেনেই সহজেই আপনার সকল অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে
পারবে। তাই আলাদা আলাদা অ্যাকাউন্টের জন্য দিন পৃথক পৃথক পাসওয়ার্ড।
নোট করে রাখুন আপনার সকল পাসওয়ার্ড
ইতিমধ্যেই আপনি জেনেছেন, সকল ওয়েবসাইটের অ্যাকাউন্টে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার
করা ঠিক নয়। ভিন্ন ভিন্ন অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করা উচিত ভিন্ন ভিন্ন
পাসওয়ার্ড। কিন্ত, এতো পাসওয়ার্ড মনে রাখা কি সম্ভব? অবশ্যই নয়! তাই
ব্যক্তিগত নোটবুক বা পাসওয়ার্ড প্রোটেক্টেড ফাইলে লিখে রাখতে পারেন আপনার
সকল পাসওয়ার্ড। শুধু নোট করে রাখলেই চলবেনা। উক্ত মূল্যবান নোটবুক বা ফাইল
অবশ্যই রাখতে হবে নিরাপদ কোন স্থানে।
পাসওয়ার্ড হতে হবে শক্তিশালী
পাসওয়ার্ড হলেই হবেনা। যেন আপনার পাসওয়ার্ড হয় অনেক শক্তিশালী। সেদিকেও
খেয়াল রাখতে হবে আপনাকে। গবেষণামূলক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সহজ ধরণের
পাসওয়ার্ড সাধারণত অনেক সহজেই হ্যাক হয়ে থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কিভাবে
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করবেন? বিভিন্ন ক্যারেক্টার, স্পেশাল চিহ্ন,
সংখ্যা মিলিয়ে বানাতে পারেন আপনার শক্তিশালী পাসওয়ার্ড। তবে পাসওয়ার্ডে
নূন্যতম ৮ অক্ষরের বেশী রাখবেন। ছোট-বড় অক্ষরের মিশ্রণ রাখাও বুদ্ধিমানের
কাজ। বেশীরভাগ লোকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেকেই তাদের নাম, মোবাইল নম্বর
কিংবা জন্ম তারিখকে পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু এ ধরণের
পাসওয়ার্ড পরিচিত লোকজনেরা খুব সহজেই বের করে ফেলতে পারেন। তাই মোটেও এ
ধরণের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত নয়। অনেকের মাঝেই 12345, 123123, abcdef,
abc123 এই ধরণের সহজ পাসওয়ার্ড দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এ ধরণের
পাসওয়ার্ড কখনো ভুলেও ব্যবহার করবেন না। এক কথায়, নিজ বুদ্ধিতে তৈরি করুন
শক্তিশালী কোন পাসওয়ার্ড।
ফিশিং সাইট থেকে বিরত থাকুন
কোন ওঁত পেতে থাকা ফিশিং সাইটে আপনার পাসওয়ার্ড দিলেই হ্যাকিং এর সম্মুখীন
হবেন নিশ্চিত। তাই ফিশিং সাইট গুলো থেকে রক্ষা পেতে সব সময় সাবধান থাকুন।
একটু খেয়াল রাখলেই ফিশিং সাইটের ফাঁদ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন।
মূল্যবান অ্যাকাউন্ট যেমনঃ ফেসবুক, জিমেইলের লগিন পেইজের মতো দেখতে অনেক
পেজ দেখা যায় অনলাইনে। এই ভুয়া পেজ বা সাইটগুলোই হলো ফিশিং সাইট। এই ধরণের
সাইটে কখনই সত্যিকারের সাইট ভেবে লগিন বা রেজিস্টার করবেন না। অরিজিনাল
সাইট ছাড়া কোন সাইটেই রেজিস্টার বা লগিন করবেন না। হ্যাকাররা মূলত বিভিন্ন
প্রলোভন দেখিয়ে এসব ফিশিং সাইটে লগিন করতে উদ্ধুদ্ধ করে থাকে।
ইউনিক রাখুন আপনার ই-মেইলের পাসওয়ার্ড
আপনি যে সাইটেই অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য রেজিস্ট্রেশন করুন না কেন। আপনার সকল
অ্যাকাউন্টের মূলে রয়েছে আপনার ই-মেইল। তাই সবার আগে নিতে হবে ই-মেইল
অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা। কারণ ই-মেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলে আপনার যেকোন
অনলাইন অ্যাকাউন্টই হ্যাক করা সম্ভব। তাই ই-মেইল অ্যাকাউন্টের সিকিউরিটি
নিয়ে সচেতন থাকুন সবচেয়ে বেশী। কারণ আপনার ই-মেইল অ্যাকাউন্ট নিরাপদে থাকলে
আপনার অন্য যেকোন অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলেও দ্রুত পুনরুদ্ধার করার সুযোগ
পাবেন। তাই ই-মেইলের পাসওয়ার্ড সবসময় শক্তিশালী এবং ইউনিক রাখেবন। ই-মেইলে
যে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন সেই পাসওয়ার্ড যেন অন্য কোন সাইটের অ্যাকাউন্টে
ব্যবহার না করেন সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
অন্যের ডিভাইসে নিজের অ্যাকাউন্টে লগিন করা থেকে বিরত থাকুন
নিরাপত্তার জন্য অনেক বিষয়েই আপনাকে থাকতে হবে সতর্ক। তাই অন্যের ডিভাইস
যেমনঃ পিসি, ট্যাব, স্মার্টফোন ইত্যাদিতে নিজের যেকোন ধরণের গুরুত্বপূর্ণ
অ্যাকাউন্টে লগিন করা থেকে বিরত থাকুন। বিশেষ করে, সাইবার ক্যাফের
কম্পিউটারের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ্য। কারণ আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে সেই
ডিভাইসে থাকতে পারে কোন বিশেষ প্রযুক্তি। যেমনঃ কি-লগার
কাজ শেষে লগ আউট করতে ভুলবেন না
কাজ শেষে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে অবশ্যই লগ আউট করবেন। এমনকি ব্যক্তিগত
কম্পিউটারেও সেটা করা উচিত। কারণ আপনার অনুপস্থিতে যে কেউ আপনার ডিভাইসে
উক্ত অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারে। তাই কাজের শেষে অ্যাকাউন্ট থেকে লগ আউট
হতে ভুলবেন না।
নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন
নিয়মিত আপনার গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টগুলো পাসওয়ার্ড নিয়মিত পরিবর্তন করার
চেস্টা করবেন। প্রতি মাসে অন্তত একবার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে পারেন।
এছাড়াও অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং জনিত কোন সন্দেহ দেখা দিলেই দেড়ি না করে
পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ফেলুন। এতে সুরক্ষিত থাকবে আপনার অনলাইন
অ্যাকাউন্ট।
সাবধান থাকুন কি-লগার সফটওয়্যার থেকে
কি-লগার হলো এক ধরণের হ্যাকিং সফটওয়্যার। এই সফটওয়্যার যে ডিভাইসে ইন্সটল
করা থাকে, ঐ ডিভাইসে ব্যবহারকারী তাঁর পাসওয়ার্ড টাইপের সময় পাসওয়ার্ড চুরি
করে থাকে। অবশ্যই, আপনি কি-লগার সফটওয়্যারের ফাঁদে পড়তে চান না? কিন্তু
কি-লগারের ফাঁদ থেকে রক্ষা পেতে আপনাকে হতে হবে বেশ সতর্ক। কারণ এ ধরনের
সফটওয়্যার আপনার অজান্তেই আপনার ডিভাইসে অন্য যেকোনভাবে ইন্সটল হতে পারে।
অনলাইন থেকে বিভিন্ন সফটওয়্যার ডাউনলোড করার সময় আপনার চোখের আড়ালেই আপনার
ডিভাইসে ঢুকে পড়ে হ্যাকারদের প্রেরিত কি-লগার সফটওয়্যার। তাই অনলাইনে ফাইল
ডাউনলোড করুন বিশ্বস্ত সোর্স থেকে। এছাড়া অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারও
ব্যবহার করতে পারেন নিরাপত্তার জন্য।
অধিক সাবধানতার জন্য ব্যবহার করুন অন স্ক্রিন কি-বোর্ড
হ্যাকিং বিষয়ক কি-লগার সফটওয়্যারগুলো মূলত আপনার ডিভাইসের কি-বোর্ড ট্র্যাক
করে থাকে। তাই অধিক সাবধানতা এবং কি-লগারের ফাঁদ থেকে বাচতে চাইলে
পাসওয়ার্ড টাইপ করতে ব্যবহার করতে পারেন অন স্ক্রিন কি-বোর্ড। এর ফলে আপনার
পাসওয়ার্ড টাইপ ট্র্যাকিং করতে পারবেনা কি-লগার টাইপের সফটওয়্যারগুলো।
আশা করছি, এই সিকিউরিটি টিপসগুলো জানা থাকলে এবং সে অনুযায়ী সচেতন থাকলে আপনি তুলনামূলক সুরক্ষিত। হ্যাকিং সংক্রান্ত আপনার নিজস্ব অভিজ্ঞতা জানাতে অথবা যেকোন মতামত শেয়ারের জন্য কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
আশা করছি, এই সিকিউরিটি টিপসগুলো জানা থাকলে এবং সে অনুযায়ী সচেতন থাকলে আপনি তুলনামূলক সুরক্ষিত। হ্যাকিং সংক্রান্ত আপনার নিজস্ব অভিজ্ঞতা জানাতে অথবা যেকোন মতামত শেয়ারের জন্য কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
প্রিয় পাঠক, আপনার একটি মন্তব্য একজন লেখক কে ভালো কিছু লেখার অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ যোগায় তাই প্রতিটি পোস্ট পড়ার পর নিজের মতামত/মন্তব্য জানাতে ভুলবেন না।পোস্টটি পড়ার পর আপনার ভাল-লাগা,মন্দ-লাগা,জিজ্ঞাসা কিংবা পরামর্শ প্রদানের জন্য দয়া করে গঠনমূলক মন্তব্য প্রদান করবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।আপনার একটি মন্তব্যই আমার নিকট অনেক মূল্যবান।আসসালামু আলাইকুম...